রংপুর প্রতিনিধি
রংপুরে বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের উন্নয়ন কাজের অর্থ আত্মসাতের অভিযোগে সাবেক উপাচার্য নাজমুল আহসান কলিমউল্লাহকে গ্রেপ্তার করেছে গোয়েন্দা পুলিশ। ঢাকা মহানগর পুলিশের (ডিএমপি) গণমাধ্যম ও জনসংযোগ বিভাগে উপকমিশনার মুহাম্মদ তালেবুর রহমান জানান, দুদকের মামলায় গতকাল বৃহস্পতিবার বেলা সাড়ে ১২টার দিকে মোহাম্মদপুরের বাসা থেকে কলিমউল্লাহকে গ্রেপ্তার করা হয়। রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের বিশেষ উন্নয়ন প্রকল্পে অনিয়মের অভিযোগে গত ১৮ জুন সাবেক দুই উপাচার্য কলিমউল্লাহ এবং এ কে এম নূর-উন-নবীসহ পাঁচজনের বিরুদ্ধে এই মামলা করে দুদক। শেখ হাসিনা ছাত্রী হল ও ড. ওয়াজেদ মিয়া রিসার্চ অ্যান্ড ট্রেনিং ইনস্টিটিউট ভবন নির্মাণে প্রায় ৪ কোটি টাকার অনিয়ম ও আত্মসাতের অভিযোগ আনা হয় সেখানে। অধ্যাপক নাজমুল আহসান কলিমউল্লাহ ২০১৭ থেকে ২০২১ সাল পর্যন্ত বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের উপচার্যের দায়িত্ব পালন করেন। এর আগে ২০১৩ থেকে ২০১৭ সাল পর্যন্ত এই পদে দায়িত্ব পালন করেন অধ্যাপক এ কে এম নূর-উন-নবী। মামলার অন্য আসামিরা হলেন, সাবেক নির্বাহী প্রকৌশলী ও দরপত্র মূল্যায়ন কমিটির সদস্য সচিব মো. জাহাঙ্গীর আলম, ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের স্বত্বাধিকারী মো. আবদুস সালাম বাচ্চু ও এম এম হাবিবুর রহমান। মামলার এজাহারে বলা হয়েছে, ‘পরস্পর যোগসাজশ, বিশ্বাসভঙ্গ এবং ক্ষমতার অপব্যবহারের মাধ্যমে’ বেরোবিতে উন্নয়ন প্রকল্পে অনুমোদিত ডিপিপি উপেক্ষা করে নকশা পরিবর্তন এবং ৩০ কোটি টাকারও বেশি মূল্যের চুক্তি মন্ত্রণালয় বা বিভাগের অনুমোদন ছাড়াই সম্পাদন করা হয়। এছাড়া, ঠিকাদারের চলতি বিল থেকে কাটা নিরাপত্তা জামানত এফডিআর (স্থায়ী আমানত) আকারে ব্যাংকে জমা রেখে, সেই এফডিআরকে লিয়েনে রেখে ঠিকাদারকে ঋণ দিতে ‘না-আপত্তি সনদ’ প্রদান করা হয়- যার মাধ্যমে বিশ্ববিদ্যালয় তথা সরকারের প্রায় ৪ কোটি টাকা সরাসরি ঠিকাদারকে দিতে সহযোগিতা করা হয়। ঠিকাদারের সঙ্গে সম্পাদিত চুক্তিতে অগ্রিম অর্থ দেওয়ার কোনো বিধান না থাকলেও, ‘আর্থিক সহযোগিতা’ দেখিয়ে ব্যাংক গ্যারান্টি নিয়ে অগ্রিম বিল দেওয়া হয়। সেই অগ্রিম বিলের বিপরীতে নেওয়া ব্যাংক গ্যারান্টিগুলো বিল সমন্বয়ের আগেই অবমুক্ত করা হয়। এছাড়া, প্রথম পরামর্শক প্রতিষ্ঠানের দেওয়া নকশা ও পরিকল্পনা না মেনে সরকারি ক্রয়বিধির বাইরে গিয়ে দ্বিতীয় পরামর্শক প্রতিষ্ঠান নিয়োগ দেওয়া হয়। আবার দরপত্রে অস্বাভাবিক মূল্যদানের (ফ্রন্ট লোডিং) মত বিষয় থাকার পরেও, পাবলিক প্রকিউরমেন্ট রুলস (পিপিআর), ২০০৮ অনুযায়ী যথাযথ মূল্যায়ন না করেই কার্যাদেশ দেওয়া হয়। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের লোকপ্রশাসন বিভাগের অধ্যাপক নাজমুল আহসান কলিমউল্লাহ বাংলাদেশ ইউনিভার্সিটি অব প্রফেশনালসের (বিইউপির) উপ-উপাচার্য হিসেবেও দায়িত্ব পালন করেছেন। জাতীয় নির্বাচন পর্যবেক্ষণ পরিষদের চেয়ারম্যান হিসেবে দায়িত্ব পালনের কারণে তিনি ব্যাপক পরিচিতি পান। কলিমউল্লাহকে ২০১৭ সালের ৩১ মে বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য করা হয়। শিক্ষক–শিক্ষার্থীদের অভিযোগ ছিল, তিনি ক্যাম্পাসে যান না। ঢাকায় লিয়াজোঁ অফিস থেকেই দায়িত্ব পালন করেন। বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক-কর্মকর্তা-কর্মচারীদের সংগঠন ‘অধিকার সুরক্ষা পরিষদ’ এর তথ্য অনুযায়ী, ২০২১ সালের ৩১ মে পর্যন্ত দায়িত্বের ১ হাজার ৪৬০ দিনের মধ্যে ১ হাজার ২২০ দিন তিনি অনুপস্থিতি ছিলেন। অনুপস্থিতির পাশাপাশি তার বিরুদ্ধে স্বেচ্ছাচারিতা, স্বজনপ্রীতি ও দুর্নীতির অভিযোগ ওঠে সে সময়। তবে তখনকার আওয়ামী লীগ সরকারের সঙ্গে ঘনিষ্ঠতার কারণে তিনি পুরো মেয়াদ উপাচার্য থাকার সুযোগ পান।
নিউজটি আপডেট করেছেন : Dainik Janata
